জাহান্নামে নারীদের শাস্তি ও কারণ। পর্ব-২
জাহান্নামীদের দেহ
রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, জাহান্নামে কাফেরদের দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান কোন দ্রুতগামী বাহনে তিন দিনের রাস্তার সমান হবে। তাদের চিবুক ওহুদ পাহাড় এবং শরীরের চামড়া তিন দিনের রাস্তা সমান মোটা হবে। [মুসলিম শরীফ]
তিরমিযী শরীফের এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন কাফেরদের চিবুক হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান, তার রান (উরু) হবে বায়জা পাহাড়ের সমান, আর জাহান্নামে তার বসার স্থান হবে তিন দিনের রাস্তার সমান লম্বা, যতটুকু দূরত্ব মদিনা থেকে রাবাযা গ্রাম পর্যন্ত। [মেশকাত শরীফ]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, জাহান্নামীর বসার স্থান হবে মক্কা থেকে মদীনার দূরত্ব সমান। [মেশকাত শরীফ]
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এক বর্ণনায় আছে, কাফেরদের চামড়া ৪২ হাত মোটা আর উপরে মুসলিম শরীফের বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিন দিনের রাস্তার সমান মোটা হবে, কিন্তু এটা কোন জটিল কথা নয়। আসল কথা হলো, একেক কাফেরের একেক ধরনের শাস্তি হবে। কারো বেশি কারো কম। কিছু কিছু বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, আমার উম্মতের কিছু লোককে জাহান্নামে এমন বড় করে দেয়া হবে যে, তাদের একজনই জাহান্নামের এক কোণা ভরে দিবে। [তারগীব ওয়াত্ তারহীব]
হযরত মুজাহিদ রহ. বর্ণনা করেন, আমাকে হযরত ইবনে আব্বাস রা. জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি জান জাহান্নামের প্রস্থ কত? আমি বললাম না, জানি না। তিনি বললেন হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! আল্লাহর কসম! তুমি জান না। নিঃসন্দেহে জাহান্নামীর কানের লতি থেকে কাঁধ পর্যন্ত সত্তর বৎসরের রাস্তা হবে। যাতে রক্ত এবং পেশাবের নালা প্রবাহিত থাকবে। [তারগীব ওয়া তারহীব]
আর যারা মন্দ কাজ করেছে, মন্দের সাজা এর অনুরূপই হবে এবং তাদের উপর লাঞ্ছনা ছেয়ে যাবে। আল্লাহর আযাব থেকে কেউ তাদের বাঁচাতে পারবে না। তাদের চেহারা এমন কুৎসিত হবে যেমন তাদের চেহারার উপর রাতের অন্ধকার ভাঁজের পর ভাঁজ করে লেপটে দেয়া হয়েছে। [সূরা ইউনুস]
লানত অর্থ আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকা। বেশির ভাগ মহিলা অন্য মহিলাদের লা’নত করে থাকে। এ কারণে সে নিজেই আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। আর আল্লাহর রহমত থেকে দূর হওয়ার অর্থই জাহান্নামে যাওয়া।
এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেল, জাহান্নামীদের চেহারা অত্যন্ত কুৎসিত হবে। হাদীসে আছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. বর্ণনা করেন, যদি জাহান্নামীদের থেকে কাউকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে তার কুৎসিত চেহারা দেখে এবং তার শরীরের দুর্গন্ধে সব দুনিয়াবাসী অবশ্যই মরে যাবে। একথা বলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. অনেক কাঁদেন। [তারগীব]
সূরা মোমেনূনে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন-
تلفح وجوههم النار وهم فيها كالحون
‘আগুন তাদের চেহারা ঝলসে দিবে, ফলে তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ সা. ‘كالحون ’ শব্দের তাফসীরে বলেন, আগুন জাহান্নামবাসীদের জ্বালিয়ে দগ্ধ করে দিবে। তাদের উপরের ঠোঁট মাথার উপর পর্যন্ত আর নিচের ঠোঁট নাভি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবায়ে কেরামকে বলেছেন, হে লোকসকল! কাঁদ, বেশি বেশি কাঁদ। যদি কাঁদা না আসে তবুও কাঁদার ভান কর। কেননা, জাহান্নামীরা জাহ্ন্নাামে এমন কাঁদা কাঁদবে যে, তাদের চোখের পানিতে চেহারায় নালা হয়ে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে যখন চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে, তখন তা থেকে রক্ত বের হতে থাকবে। যে কারণে তাদের চোখে জখম হয়ে যাবে (চোখের পানি এবং রক্তের পরিমাণ এত বেশি হবে), যদি তাতে নৌকা ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে তা চলা শুরু করবে। [শরহুস্ সুন্নাহ]
কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
‘যারা হতভাগা তারা জাহান্নামে এ অবস্থায় থাকবে যে, তারা গাধার ন্যায় চিৎকার করতে থাকবে, তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। [সূরা হুদ:১০৬]
জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তির বিনিময় সব কিছু দান করার ইচ্ছা
আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-
‘যদি জালেম (কাফের মুশরেকদের) দুনিয়ার সব সম্পদ এবং তার সাথে এ পরিমাণ আরো সম্পদ থাকে, তাহলে তারা কিয়ামতের দিন ভয়াবহ আযাব থেকে মুক্তি পেতে সবকিছু দিয়ে দিতে চাবে। [সূরা যুমার:৪৭]
সূরা মা’আরেজের এক আয়াতে রয়েছে, ‘কেয়ামতের দিন অপরাধীরা আযাব থেকে মুক্তির জন্য নিজের স্ত্রী-পুত্র কন্যা ও ভাই-বোনসহ পরিবারের সবাইকে এবং দুনিয়ার সব সম্পত্তি দিয়ে হলেও বাঁচতে চাবে, কিন্তু সে দিন সেখানে কোন মাল-সম্পদ থাকবে না, আর কোন কিছু মুক্তিপণ হিসেবেও গ্রহণ করা হবে না। যদি এমন হয়ও, তবুও তা বিনিময় হিসেবে কখনো কবুল করা হবে না। যেমন সূরা মায়েদায় বর্ণিত হয়েছে-
‘যারা কাফের, যদি তাদের কাছে দুনিয়াতে যত সম্পত্তি আছে এবং সমপরিমাণ আরো সম্পত্তি দেয়া হয়, তাহলে তারা কেয়ামতের দিনের ভয়াবহ আযাব থেকে মুক্তি পেতে তাদের সবকিছুই মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দিতে চাবে, অথচ তাদের থেকে তা কবুল করা হবে না, আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। [সূরা ময়িদা:৩৬]
জান্নাতীদের হাসি কোরআন শরীফে এরশাদ হয়েছে, জান্নাতীরা জাহান্নামীদের অবস্থা দেখে হাসতে থাকবে। সূরা মোতাফ্ফিফীনে বলা হয়েছে-
‘আজ ঈমানদাররা কাফেরদের নিয়ে তাদের (অবস্থা) দেখে হাসবে এবং পালঙ্কসমূহের উপর বসে তাদের অবস্থা দেখতে থাকবে। [মুতাফ্ফিফীন:৩৪-৩৫]
তাফসীর দুররে মানসূরে হযরত কাতাদাহ্ রাহ. থেকে বর্ণিত, জান্নাতে এমন কিছু জানালা হবে যেগুলো দিয়ে জান্নাতীরা জাহান্নামীদের করুণ অবস্থা দেখতে পাবে, আর তাদের নিয়ে হাসাহাসি, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করবে, যেমন দুনিয়াতে মুমিনদের দেখে তারা হাসাহাসি ও ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করত। উদ্দেশ্যপূর্ণ ইঙ্গিত করে মজা লুটত। এমনকি ঘরে বসেও তাদের সমালোচনা করত। আল্লাহ তা’আলা বলেন- ‘যারা সীমালঙ্ঘণকারী তারা ঈমানদারদের নিয়ে হাসত’। [মুতাফ্ফিফীন:২৯]
সূরা মুমিনে আছে, জাহান্নামীদের আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমার বান্দাদের মধ্যে একদল (ঈমানদার) ছিল, যারা আমার কাছে আরজ করত, হে আমাদের পরওয়ারদেগার, আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের মাফ করে দিন, আমাদের প্রতি রহম করুন, আপনি সকল রহমকারী থেকে বড় রহমকারী। তোমরা তাদের বিদ্রƒপের পাত্র বানিয়ে রাখতে। এমনকি তোমরা সর্বদাই তাদের বিদ্রƒপ করতে। তোমরা আমাকে একেবারেই ভুলে গিয়েছিলে। আজ আমি তাদের সেই সবরের বিনিময় দিলাম, আজ তারা সফলকাম।
দুনিয়াতে কাফেররা ঈমানদারদের হাসি কৌতুক আর উপহাসের পাত্র বানায়, তাদের নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রƒপ করে। কাফেররা যখন জাহান্নামে যাবে তখন তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের তাদের সাথে না দেখে খুবই বিস্মিত হবে। কোরআন করীমে এরশাদ হয়েছে-
‘আর জাহান্নামীরা বলবে, কি ব্যাপার! সে সমস্ত লোকদের তো দেখছি না, যাদের আমরা খারাপ লোক হিসেবে দেখতাম, আমরা কি ভুল করে তাদের নিয়ে হাসি তামাশা করতাম, না তাদের দেখামাত্রই চোখে চক্কর আসত। [সোয়াদ:৬২]
যখন তাদের এখানে দেখছি না তাহলে বলা যায়, আমরা তাদের খারাপ জেনে হাসি-ঠাট্টা করে ভুল করেছি। প্রকৃতপক্ষে তারা ভাল লোকই ছিল, যারা আজকে আমাদের সাথে আসেনি অথবা এ-ও হতে পারে, তারা এখানে আছে, কিন্তু আমরা তাদের দেখছি না।
গোমরাহকারীদের প্রতি জাহান্নামীদের ক্ষোভ যেসব লোক মানুষদের গোমরাহ করত তাদের প্রতি জাহান্নামীদের রাগ আসবে। জাহান্নামীরা তাদের বলবে-
‘আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম, তোমরা কি আমাদের থেকে আল্লাহর আযাবের কিছু অংশ দুর করতে পার? [সূরা ইবরাহীম:২১] কোরআনের ভাষায় গোমরাহকারীরা উত্তর দিবে-
‘তোমাদের আর আমরা কি বাঁচাবো, আমরা নিজেরাই তো বাঁচতে পারছি না।) যদি আল্লাহ তা’আলা আমাদের বাঁচার কোন রাস্তা দেখাতেন, তাহলে তোমাদের সে রাস্তা দেখিয়ে দিতাম। আমাদের উভয়ের একই অবস্থা, আমরা পেরেশান বা ধৈর্যশীল হই, বাঁচার কোন উপায় নেই। [সূরা ইবরাহীম:২১]
তখন জাহান্নামীরা অত্যধিক ক্রুদ্ধ হয়ে গোমরাহকারীদের বিরুদ্ধে আল্লাহ পাকের দরবারে আরজ করবে-
‘হে আমাদের পরওয়ারদেগার, আমাদের সেসব শয়তান এবং মানুষদের দেখিয়ে দিন যারা আমাদের গোমরাহ করেছে; আমরা তাদের পায়ের নিচে পিষে ফেলব, যেন তারা খুব লাঞ্ছিত হয়। [সূরা হামীম সেজদা:২৯]
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
Comments
Post a Comment